Monday, December 14, 2015

কোরআন এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ আয়াত

কোরআন এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ আয়াত সম্পর্কে

সুরা হাশরের সর্বশেষ তিন আয়াত


هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ
“হু আল্লা হুল্লাজী লা(আ) ইলাহা ইল্লা হু। আলিমুল গাইবী ওয়াশ শাহাদাতী হুয়ার রাহমানুর রাহীম।
هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ
হু আল্লা হুল্লাজী লা(আ) ইলাহা ইল্লা হু। আল মালিকুল কুদ্দুসুস সালামুল ম্যু মিনুল মুহাইমিনুল আজিজুল জাব্বারুল মুতাকাব্বির। ছুব হানাল্লাহী আম্মা ইউশরিকুন।
هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاء الْحُسْنَى يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
হু আল্লাহুল খালেকুল বারিয়্যুল মুছাওরেলাহুল আছমা(আ)উল হুছনা। ইউ ছাব্বিহু লাহু মা ফিছ ছামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্ ওয়া হুয়াল আজীজুল হাকীম।“


সুরা হাশরের সর্বশেষ তিন আয়াত পাঠ করিবে । আল্লাহ তায়ালা তাহার জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা নিযুক্ত করে দিবেন,তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঠকারীর জন্য রহমতের দোয়া করবে। যেদিন এই আয়াত তিনটি পাঠ করিবে সেদিন পাঠকারী মারাগেলে শহীদের মউত হাসিল করিবে। যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এভাবে পাঠ করিবে সেও একই মর্তবা লাভ করিবে। (সুবহানআল্লাহ)
 আয়াতূল কুরছী

হাদীস শরীফ এ বর্ণিত আছে, যে লোক সকালে ও শয়নের পূর্বে আয়াতূল কুরছী পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং তার তত্ত্বাবধানকারী। কাজেই সারাদিনের মধ্যে শয়তান তার নিকট ঘেঁষতে পারে না। কেননা, আয়াতুল কুরছী পাঠকারীর নিকট শয়তান আগমন করবে না বলে ওয়াদাবদ্ধ রয়েছে।

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক বস্তুর একটি শীর্ষস্থান থাকে। পবিত্র কোরআনের শীর্ষস্থান হলো সুরা বাকারা। আর এ সুরায় এমন একটি আয়াত বিদ্যমান যা পবিত্র কোরআনের সমস্ত আয়াতের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়। তা হল আয়াতুল কুরছী। (তিরমযী শরীফ)

প্রত্যেক নামাযের পর চৌদ্দবার আয়াতুল কুরছী পাঠ করলে যাবতীয় বালা-মুসীবত ও বিপদাপদের থেকে মুক্তি লাভ হয়।

اللّهُ لاَ إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَاء وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَلاَ يَؤُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ


আল্লাহু লা (আ)ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম লা তা খুজুহু সিনাত্যু ওয়ালা নাওম। লাহু মা ফিছ ছামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্।মান জাল্লাজী ইয়াস ফায়ু ইন দাহু(উ) ইল্লা বি ইজনিহি ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খাল ফাহুম ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম মিন ইল্ মিহি(হি) ইল্লা বিমা সা (আ) ওয়াসিয়া কুরসি ইউ হুস ছামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্ ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিউল আজীম।

আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।


আয়াতুল কুরছির মাহাত্ম্য
আল কোরআন পৃথিবীর বুকে সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান এই আল কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াতগুলো নিয়েই আয়াতুল কুরছি। মহান আল্লাহর একাত্মবাদ, প্রভুত্ব, স্থায়িত্ব, কুদরত, ইচ্ছা, অধিকার, জ্ঞান, ক্ষমতা ইত্যাদি গুণাবলীর বর্ণনা ও আলোচনার সুস্পষ্ট নিদর্শন আয়াতুল কুরছি। কোরআনের বিভিন্ন স্থানে মহান আল্লাহর আরও নানা বৈচিত্র্যমণ্ডিত গুণাবলীর কথা প্রকাশ থাকলেও একত্রে মৌলিক গুণাবলীর সমাহার এবং বর্ণনা আয়াতুল কুরছির মতো কোথাও প্রকাশ হয়নি। এ জন্যই আয়াতুল কুরছির মর্যাদা অতুলনীয়, অনস্বীকার্য।

আবু দাউদ শরিফে বর্ণিত, হজরত উয়াইলা ইবনে আসক্কা (রা•) প্রকাশ, একদা নবী করিম (স•) মোহাজেরদের জমাতে আগমন করলে এক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করল-  ‘হে আমাদের রাসূল! পবিত্র কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত কোনটি?’ উত্তরে মহানবী (স•) বলেছিলেন-  ‘আয়াতুল কুরছি।’

আগেই বলা হয়েছে, আয়াতুল কুরছির শ্রেষ্ঠত্বের কারণ মূলত মহান আল্লাহতালার ‘ইসমে জাত’ ও ‘ইসমে সিফাতের’ অভূতপূর্ণ সম্মেলন। আয়াতুল কুরছি এভাবেও যথেষ্ট মর্যাদাবান যে, এটি পবিত্র কালামুল্লাহ শরিফের সূরা বাকারাহ’র অংশ। তিরমিজি শরিফে হজরত আবু হোরায়রা (রা•) থেকে বর্ণিত, ‘প্রতিটি বস্তুর একটি শীর্ষ চূড়া রয়েছে। পবিত্র কালামুল্লাহ শরিফের শীর্ষ সূরা হল সূরায়ে বাকারাহ এবং সর্দার আয়াত হল আয়াতুল কুরছি।’

আয়াতুল কুরছিতে মহান আল্লাহপাকের দশটি বিশেষ মৌলিক ও শ্রেষ্ঠতম গুণের কথা বিস্তৃত হয়েছে। এ জন্যই বুজুর্গ ব্যক্তিবর্গ আয়াতুল কুরছিকে ‘দশ রত্নের সমাহার’ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন। আয়াতুল কুরছি মহান আল্লাহর যে দশটি সুস্পষ্ট বিশেষ গুণের বর্ণনা করে সেগুলো হলঃ

১• ‘আল্লাহ ব্যতীত কোনই উপাস্য নেই’ এই বাক্যের মাধ্যমে মহান আল্লাহর একাত্ববাদ ও অদ্বিতীয়ত্বের ঘোষণা করা হয়েছে। অন্য সবকিছুর অংশীদারিত্ব ও প্রভুত্বের মূলোৎপাটন করা হয়েছে।
২• ‘যিনি চির জীবন্ত ও সদা বিরাজমান’ বাক্য দ্বারা যারা (কাফের ও মুশরেক) আল্লাহ সচেতন ও অন্ধ বলে ধারণা পোষণ করত তাদের অবুঝ ও ভ্রান্ত ধারণার জবাব প্রকাশ করা হয়েছে।
৩• ‘তন্দ্রা এবং নিন্দ্রা তাকে স্পর্শ করতে পারে না।’ বাক্য দ্বারা মহান আল্লাহ প্রমাণ করেছেন, তার সৃষ্ট অন্যান্য জীবের গুণ ও স্বভাব ধর্ম, দোষ দুর্বলতা প্রভৃতি থেকে স্বয়ং আল্লাহপাক মুক্ত ও পবিত্র।
৪• নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে সব তাঁহারই’। এখানে, আল্লাহ অধিপতি বলে ঘোষণা করেছেন। এই মহাজগতে আমরা যা দর্শন করি এবং যা করি না সব কিছুর মালিক যে একমাত্র আল্লাহতায়ালা তারই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।
৫• ‘তাঁহার অনুমতি ব্যতীত কেউই তাঁহার নিকট অপরের মুক্তির জন্য সুপারিশ করতে পারবে না’ বাক্যটি দ্বারা প্রকাশ, আল্লাহ ছাড়া মুক্তিদাতা, সাহায্য প্রদানে সক্ষম আর কেউই নেই, কিছুই নেই।
৬• ‘অগ্র-পশ্চাৎ সম্পর্কে তিনি সুপরিজ্ঞাত’ বাক্যটি দ্বারা প্রমাণিত যে, আল্লাহ পাক অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পুরোপুরিভাবে অবগত। তাঁর অজান্তে, অলক্ষ্যে কোন কিছুই ঘটে না। প্রতিটি কার্যক্রম তিনি অবলোকন করেন।
৭• ‘তাঁহার ইচ্ছা ব্যতীত তাঁহার অনন্ত জ্ঞানের কোন বিষয়ই কেউ ধারণা করতে পারে না।’ বাক্যটিতে মানুষের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কথা বিস্তৃত হয়েছে। সব জ্ঞানের আধার স্বয়ং আল্লাহপাক, মানুষ তাঁর সৃষ্টি এবং মানুষের জ্ঞান অসীম স্রষ্টার অসীম জ্ঞানের কাছে অতি সামান্য, নগণ্য।
৮• ‘তাঁহার আসন ও সাম্রাজ্য নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল পরিব্যাপ্ত হয়ে রয়েছে’ এই বাক্যটি দ্বারা আর কোন সন্দেহ ছাড়াই প্রকাশ হয়। জীব ও জড় জগতের মধ্যে তার জ্ঞান, শক্তি, প্রতিপত্তি ও সাম্রাজ্য পরিবেষ্টিত। তাঁর শক্তি ও শাসন অতিক্রমে সক্ষমে কিছুই নেই, কারও অধিকার নেই তার এই শাসনের বাইরে চলে যায়। তিনিই সব কিছুর একমাত্র অধিপতি, অসীম ক্ষমতাবান, মহাশক্তিধর।
৯• ‘এতদুভয়ের সংরক্ষণের তাঁহাকে বিব্রতবোধ করতে হয় না’ বাক্যটিতে প্রমাণিত হয় যে, তার এই বিশাল সাম্রাজ্য পরচালনায় কোন প্রকার বিঘ্ন সৃষ্ট হয় না, তিনি মোটেও বিব্রতবোধ করেন না। আল্লাহর অসীম শক্তি, অনন্ত মহিমার বলে এই মহাবিশ্বের জীব ও জড় জগতের প্রতিপালন ও রক্ষণাবেক্ষণ তার কাছে অতি সহজ।
১০• ‘আর তিনি সমুন্নত ও মহীয়ান’। বাক্যের মাধ্যমে ঘোষিত, একমাত্র আল্লাহতায়ালাই অন- ঐশী শক্তির অধিকারী। আল্লাহর ন্যায় গৌরব ও সম্মানের অধিকারী অন্য আর কিছুই নেই, এর সমকক্ষও নেই, এর অংশীদারও নেই। স্বয়ং আল্লাহপাকই সব গৌরব, সম্মান ও মর্যাদার একমাত্র অধিকারী। আল্লাহপাকের অন-, অসীম সম্মান, শ্রেষ্ঠত্ব ও অন্যান্য অবিস্মরণীয় গুণাবলীর প্রকাশই আয়াতুল কুরছির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় বলেই আয়াতুল কুরছির মর্যাদা এত বেশি। তিরমিজি ও বোখারি শরিফে প্রকাশ, ‘যে ব্যক্তি সকালে ও শয়নকালে আয়াতুল কুরছি পাঠ করে, আল্লাহতায়ালা তার রক্ষক। সুতরাং দিবস রজনীর মধ্যে শয়তান তার নিকটতর হতে পারে না।’

আয়াতুল কুরছির মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের পরিমাণ প্রকাশ মূলত অসম্ভব। আমাদের হাতের দশ আঙুল, আয়াতুল কুরছির দশ দিক দশ লতিফা ইত্যাদি হেফাজতের শ্রেষ্ঠতম আয়াত বলে বর্ণিত।

হযরত উবাই ইবনে কা’ব থেকে বর্ণিত আছে, আয়াতুল কুরছির একটি জিহ্বা ও দুইটি মুখ রয়েছে। এটি ফেরেশতার আকারে আল্লাহপাকের মর্যাদাশীল আরশের ছাদে বসে আল্লাহপাকের পবিত্রতা ও গুণাবলী বর্ণনা করছে।’

আল কোরআন, আল্লাহপাকের বিস্ময়কর ও অনন্য সৃষ্টি। সমগ্র মুসলিম জাতির মুক্তির ধারক, পথপ্রদর্শক এই কোরআন। আয়াতুল কুরছি সেই কোরআনেরই অন্যতম আয়াতের সমাবেশ। আমাদের সবাইকেই আয়াতুল কুরছির মাহাত্ম্য, মর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্ব মেনে, বুঝে জীবন পরিচালনা করা উচিত। তবেই মিলবে মুক্তির পথ।আরো জানতে ঘুরে আসুন     http://mufti-najar-alqasem.blogspot.com


No comments:

Post a Comment